বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ সমুদ্রের জল ছুঁয়ে নামবে বিমান। জল ছুঁয়ে উড়াল দিবে আকাশে। এমন অবিশ্বাস্য বিষয় বাস্তবে রূপ দিতে দেশে প্রথমবারের মতো সমুদ্রের ওপর রানওয়ের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে।
রবিবার (২৯ আগস্ট) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান। পরে বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন।
মো. মোকাম্মেল হোসেন বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকেই আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিবহন, নিরাপদ ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব। বিমান থেকে যাত্রীরা দেখবে সাগরের সৌন্দর্য ও শোভা। সাগরের পানি ছুঁইয়ে নামবে বিমান।
প্রধানমন্ত্রীর আকাশ ছোঁয়া অবদানের কথা তুলে ধরে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরের বর্তমান অবস্থাও উপস্থাপন করেন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বেঁচে থাকলে ৪০ বছর আগেই এই দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছে যেত। আমরা এখন দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি।
কক্সবাজারের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আলাদা আকর্ষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রতি শীত মৌসুমে আমাদের নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে যেতেন। উখিয়াতে জঙ্গলের পথ বেয়ে বেড়াতে যেতাম। বাঘ, হাতির ডাক শোনতাম। যদিও এখন সেই চিহ্ন নেই। কক্সবাজার সৈকতে যে ঝাউ বাগানটা দেখেন তা বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি করা। কক্সবাজারকে আকর্ষণীয় পর্যটন নগরী হিসেবে গড়া স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর।
তিনি বলেন, এক সময় কক্সবাজারে নামলেই শুটকির গন্ধ পাওয়া যেত। সেই গন্ধ এখন পাওয়া যায় না। খুরুশকুলে আধুনিক একটা শুটকির হাট করে দেব, যাতে সেখানকার বাসিন্দারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সোনাদিয়াতে পরিবেশ বান্ধব ট্যুরিজম স্পট করে দেব। টেকনাফে ইকোনোমিক জোন করা হবে। পুরো কক্সবাজারকে উন্নত করতে আমাদের প্ল্যান রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা করে দিয়ে যান জাতির পিতা। পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা জাতির পিতা সম্পর্কে কুৎসা রটনা করে গেছেন। বিএনপি, জাতীয় পার্টি যারা ক্ষমতায় ছিলেন কোন কাজই করেনি। ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর বিমানবন্দরকে কিভাবে উন্নত করা যায়, সেই প্রকল্প হাতে নিই। কক্সবাজার বিমানবন্দর তারই একটি অংশ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
কক্সবাজার হবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ও আধুনিক পর্যটন নগরী, এটা বলেই সম্প্রসারিত রানওয়ের কাজের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান কানিজ ফাতেমা আহমেদ, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান মেয়র, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দিনরাত সাগরজল ছুঁয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারবে এই রানওয়েতে।
দেশে প্রথমবারের মত সমুদ্রের বুকে নির্মিতব্য ১৭০০ ফুটের রানওয়ের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যার পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
রানওয়ের অন্তত ৭০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের পানির ওপর। এটিই হবে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হলে কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চীনের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটার ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো (সিওয়াইডব্লিউসিবি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন-জেভি যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরে বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার-এর দৈনিক ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ১৫টির অধিক ফ্লাইট পরিচালিত করছে। কক্সবাজার-যশোর রুটে চিংড়ি পোনা সরবরাহ দিচ্ছে কয়েকটি কার্গোবিমান।
বেবিচক সূত্র মতে, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৫০০ ফুট। সাগরবক্ষে বিস্তৃত হওয়ার পর কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ১০ হাজার ৭০০ ফুট। এটি হবে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার থেকে সরাসরি পূর্ণ লোডে সুপরিসর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা, সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন প্রিসিশন অ্যাপ্রোচ ক্যাট-১ লাইটিং সিস্টেম সংস্থাপনের ফলে রাত্রিকালীন বিমান পরিচালনা, বিমানবন্দরে যাত্রী ও কার্গো পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আকাশপথে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন সম্ভব হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর, ৭৪৭-৪০০ ও এয়ারবাসের মতো উড়োজাহাজ সহজেই ওঠা-নামা করতে পারবে।
জানা গেছে, নির্মিতব্য রানওয়েতে প্রথমে সাগরের নিচে স্থাপন করা হবে জিওটিউব, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে পানি। শুরু হবে খনন প্রক্রিয়া ও বালু ভরাট কার্যক্রম। এরপর প্রাথমিক পর্যায়ে হতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে হবে বালুর স্তর বিন্যাস। চূড়ান্ত পর্যায়ে হবে রানওয়ের জন্য বালুর স্তর বিন্যাস। তারপর হবে পাথরে স্তর বিন্যাস এবং নিশ্ছিদ্রকরণ, পিচ ঢালাই। এভাবেই তৈরি হবে রানওয়ে এবং প্রাথমিক সমুদ্র হতে রক্ষাকারী বাঁধ। এর পরপরই হবে রানওয়ের শোভাবর্ধন ও নির্দেশক বাতি স্থাপন।
সমুদ্র তলদেশের ওপর ব্লক তৈরি করে এর ওপর স্থাপনা নির্মাণ করা। দেশে এই প্রথম কোন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায়। সমুদ্রের কিছু অংশ ভরাট করে সেখানে নির্মাণ করা হবে রানওয়ে। এরইপর সমুদ্রের পানি ছুঁয়ে আকাশে উড়াল দিবে বিমান।
Leave a Reply